বাংলা ভাষার উদ্ভব
বাংলা ভাষা ইন্দো- ইউরোপীয় মূল ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫,০০০ বছর পূর্বে ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষার অস্তিত্ব ছিল। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ বছর পূর্বে ইন্দো-ইউরোপীয় মূল ভাষার দুই শাখা কেন্তম ও শতম শাখার ইন্দো এশীয় রূপ শতম শাখা থেকে প্রাচীন আর্য ভাষার উদ্ভব।ভারতীয় আর্য শাখার সৃষ্টি হয় প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দে। ভারতীয় আর্য শাখার সৃষ্টি হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দে। ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর।
(ক) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা: সময় খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দ পর্যন্ত। এ সময়ের প্রচলিত ভাষা হচ্ছে- বৈদিক ও সংস্কৃত। আর্যদের ধর্মগ্রন্থ ‘বেদ’ এর ভাষা হচ্ছে-বৈদিক। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে বিখ্যাত বৈয়াকরণ ও পÐিত পাণিনি বৈদিক ভাষার সংস্কার করে নির্দিষ্ট সূত্র প্রদান করেন। এটি সংস্কৃত নামে পরিচিত। আর্য ভাষা সাধারণের জড়তাপূর্ণ উচ্চারণের ফলে তৎসম শব্দের পরিবর্তন সাধিত হয় এবং পালি ভাষার উদ্ভব ঘটে।
(খ) মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা: সময় খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে ১০০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার স্তরগুলো হচ্ছে- পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ। প্রাকৃত ভাষা অঞ্চল ভেদে বিভক্ত হয়েছে যেমন- মাগধী, মহারাষ্ট্রী, অর্ধ-মাগধী ও শৌরসেনী।
(গ) নব্য ভারতীয় আর্যভাষা: সময় খ্রিষ্টীয় দশম শতক থেকে আধুনিক কাল। দশম থেকে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত বাংলা ভাষার আদিস্তরের স্থিতিকাল। নব্য ভারতীয় আর্যভাষায় বিভক্ত শাখা হচ্ছে- বাংলা, হিন্দি, মৈথিলি, আসামি, উড়িয়া, ভোজপুরিয়া, মারকাঠি ইত্যাদি।
প্রাকৃত ভাষার দুর্বল কাঠামো এবং ব্যাকরণবদ্ধ রূপের স্থিতি না থাকায় জনসাধারণের উচ্চারণে ও শৈথিল্য পরিলক্ষিত হয় এবং নানা অপভ্রংশের সৃষ্টি হয়। পূর্ব ভারতে প্রচলিত মাগধী প্রাকৃতজাত মাগধী অপভ্রংশ হতে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে বাংলা ভাষা উৎপত্তি লাভ করে।
🟠 ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাংলা ভাষার উৎপত্তি খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতকে। ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা ভাষায় উৎপত্তিকাল দশম শতকে।
🟠 স্যার জর্জ গ্রিয়ারসন ও ড. সুনীতি কুমারের মতে, মাগধী প্রাকৃতের বিকৃত রূপ মাগধী অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম।
🟠 ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, গৌড়িয় প্রাকৃতের অপভ্রংশ রূপ গৌড়িয় অপভ্রংশ থেকে বাংলা ভাষার জন্ম।